শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:২৮ অপরাহ্ন
দোহার নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি:: ঢাকার নবাবগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সদ্য পদত্যাগ করা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি এবং অনৈতিক কর্মকান্ডে ডুবতে বসেছে বিদ্যালয়টি। এমন অভিযোগ বিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষকসহ অভিভাবকদের। তাঁদের দাবি আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে গঠিত কমিটি যেন সঠিকভাবে তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এদিকে সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানের বিষয়ে বিদ্যলয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানায়, আব্দুল মান্নান সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই ২০২০ সালের ২০ আগস্ট তৎকালিন নবাবগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক আহমেদকে ম্যানেজ করে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদটি বাগিয়ে নেন। এরপর শুরু করেন দুর্নীতি এবং অনৈতিক কর্মকান্ড। তাঁর অনৈতিক কর্মকান্ড এতটাই প্রসার লাভ করে যে তাঁর বিরুদ্ধে কোন শিক্ষক কর্মচারী কথা বলতে সাহস পেত না। ওই সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের একাধিক নেতাকর্মী ও উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিদের যোগসাজসে সকল অপকর্মই তাঁর বৈধ হয়ে যেত।
আব্দুল মান্নান নবাবগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহনের পর বিদ্যালয়ে পুরাতন ভবন কোন রকমের টেন্ডার ছাড়াই নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমি বালু দিয়ে ভরাট করলেও তাঁর কোন লিখিত হিসাব নেই তাঁর কাছে। বিদ্যালয়ের জমিতে হওয়া একাধিক কাঠ গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন। খরচের খাতায় তাঁর হিসাব নেই।
অপরদিকে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অফিস সহকারি ও পিয়নের ২৪ মাসের বেতন ভাতা বন্ধ করে রাখেন। তাঁর কারনে এসব শিক্ষকগন মানবেতর জীবন যাপন করে। এছাড়া বিদ্যালয়টি সরকারি করার ঘোষণা দেওয়া হলে তিনি সরকারি আইন না মেনে ১৯ জনকে অব্যহতি দেন। তাঁরপর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন করে খন্ডকালিন শিক্ষক ও কর্মচারী নিযোগ দেন অর্থের বিনিময়ে। তিনি প্রতিবছরই প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিতেন। কিন্তু এ বিষয় দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা দেখেও না দেখার ভান করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, বিভিন্ন সময়ে তাঁদের কাছ থেকে বেতন সেশন নিলেও খাত উল্লেখ না করে রশিদ দেয়। তাঁদের এ রকম অনেক ছাত্রের সাথেই করেছে। এতো দিন ভয়ে কথা বলিনি।
অভিভাবক সামসুদাদীন বলেন, প্রধান শিক্ষক মান্নান সাহেবের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ। অনেক প্রতিবাদ করেও তাঁকে সংশোধন করা যায়নি। স্কুলের উন্নয়ন কাজ করে কাউকে হিসেব দেয়নি। এরকম অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। তিনি বলেন, মান্নান সাহেব তাঁর কুট কৌশল দ্বারা নবাবগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি ধ্বংস করে ফেলেছে। সে বিগত সময়ে যতগুলো বিদ্যালয়ে কাজ করেছেন সব জায়গায় অনিয়ম করেছেন। তাঁর দ্রুত বিচার করা উচিত।
তাঁর অনিয়মের একটি ভাউচার যাচাই করে দেখা যায়, গত ০১/০৬/২২ সনে বিদ্যালয়ের জন্য ওয়ালটন এলইডি টিভি ক্রয় করে ৮১ হাজার টাকায়। আবার ৩০/০৫/২২ একই বছরে ওয়ালটনের আরেকটি এলইডি টিভি ক্রয় দেখায় ৯৪ হাজার ৯শত টাকায়। যদিও প্রতিষ্ঠানে একটি টিভি রয়েছে। বিদ্যালয়ের মাঠে বালু ভরাট বাবদ সাদা কাগজে ভাউচার দেখায় ২০ হাজার টাকা। যেখানে কোনো সীল সহি নেই।
এবিষয়ে ২০২২ সালের এপ্রিলের ২১ তারিখে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক তাঁর অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য চিঠি ইস্যু করে। পরবর্তীতে সেটাও আলোর মুখ দেখেনি।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, তাঁর দুর্নীতির বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে অভ্যান্তরিন তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষী প্রমানিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, তিনি কোনো অনিয়ম করেননি। এসব ষড়যন্ত্র। বিল ভাউচারে সাক্ষর না করে টাকা নেয়ার বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলেনি। তবে শিক্ষার্থীদের কাছে এসব অনিয়ম দুর্নীতির কথা স্বীকার করে লিখিতও দিয়েছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, তাঁর বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করছে। দোষী স্বাবস্থ্য হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।